সমাস
Nadim Sir
01316-903472
সমাস মানে সংক্ষেপ , মিলন , একাধিক পদের একপদীকরণ । অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।
যেমন : দেশের সেবা = দেশসেবা , বই ও পুস্তক = বইপুস্তক , নেই পরোয়া যার = বেপরােয়া ।
সমাসের
জন্য কয়েকটি সংজ্ঞা/ টার্মস জানা খুবই জরুরি। এগুলো হলো-
ব্যাসবাক্য: যে বাক্যাংশ থেকে সমাসের মাধ্যমে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ব্যাসবাক্য। একে সমাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্যও বলা হয়।
সমস্ত পদ: ব্যাসবাক্য
থেকে সমাসের মাধ্যমে যে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয়
সমস্ত পদ।
সমস্যমান পদ: ব্যাসবাক্যের
যে সব শব্দ সমস্ত পদে অন্তর্গত থাকে, সমস্ত পদের সেই সব
শব্দকে সমস্যমান পদ বলে।
পূর্বপদ : সমস্ত পদের প্রথম অংশ/ শব্দকে পূর্বপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের প্রথম সমস্যমান পদই পূর্বপদ।
পরপদ/ উত্তরপদ: সমস্ত পদের
শেষ অংশ/ শব্দকে পরপদ/ উত্তরপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের শেষ
সমস্যমান পদই পরপদ।
যেমন, সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন
এখানে
ব্যাসবাক্য হলো- ‘সিংহ চিহ্নিত আসন’। আর সমস্ত পদ হলো ‘সিংহাসন’। সমস্যমান পদ হলো ‘সিংহ’ আর ‘আসন’। এদের মধ্যে ‘সিংহ’ পূর্বপদ, আর ‘আসন’ পরপদ।
আবার, আমিষের অভাব = নিরামিষ
এখানে, পূর্বপদ ‘নিঃ’ বা অভাব। আর পরপদ হলো ‘আমিষ’।
সমাস প্রধানত ছয় প্রকার : দ্বন্দ্ব , কর্মধারয় , তৎপুরুষ , বহুব্রীহি , দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব সমাস ।
১ . দ্বন্দ্ব সমাস
যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে , তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন - তাল ও তমাল = তাল - তমাল , দোয়াত ও কলম = দোয়াত - কলম। এখানে তাল ও তমাল এবং দোয়াত ও কলম প্রতিটি পদের অর্থের প্রাধান্য সমস্ত পদে রক্ষিত হয়েছে ।এ সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ বোঝানোর জন্য ব্যাসবাক্যে এবং , ও, আর = এ তিনটি অব্যয় পদ ব্যবহূত হয় ।
যেমন - মাতা ও পিতা = মাতাপিতা ।
দ্বন্দ্ব সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয় ।
১ . মিলনার্থক শব্দযােগে - মা - বাপ , মাসি - পিসি , ভিন – পরি , চা - বিস্কুট ইত্যাদি ।
২. বিরােধার্থক শব্দযােগে দা - কুমড়া , অহিনকুল , মর্গ - নরক ইত্যাদি । |
৩. বিপরীতার্থক শব্দযােগে আয় - ব্যয় জমা - খরচ , ছােট - বড় , লাভ - লােকসান ইত্যাদি ।
৪ . অঙ্গবাচক শব্দযােগে - হাত - পা , নাক - কান , বুক - পিঠ ইত্যাদি ।
৫ . সংখ্যাবাচক শব্দযােগে সাত - পাঁত , নয় - ছয় , সাত - সতের , উনিশ - বিশ ইত্যাদি ।
৬ . সমার্থক শব্দযােগে হাট - বাজার , ঘর - দুয়ার , কল - কারখানা , খাতা পত্র ইত্যাদি ।
৭. প্রায় সমার্থক শব্দযােগে - কাপড়-চোপড়, পোকা-মাকড়, দয়া-মায়া ইত্যাদি ।
৮ . দুটি সর্বনামযােগে - যা – তা , যে - সে , যথা — তথা , তুমি - আমি , এখানে - সেখানে ইত্যাদি।
৯ . দুটি ক্রিয়া বিশেষণযোগে - দেখা - শােনা, যাওয়া - আসা , চলা - ফেরা , দেওয়া - থোওয়া ইত্যাদি।
১০ . দুটি ক্রিয়া বিশেষণযােগে - ধীরে - সুস্থে , আগে - পাছে , আকারে - ইঙ্গিতে ইত্যাদি ।
১১ . দুটি বিশেষণযােগে - ভালাে - মন্দ , কম - বেশি , আসল - নকল , বাকি - বকেয়া ইত্যাদি ।
অলুক দ্বন্দ্ব - যে দ্বন্দ্ব সমাসে কোনাে সমস্যমান পদের বিভক্তি লােপ হয় না , তাকে অলুক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন - দুধে - ভাতে , জলে - স্থলে , দেশে - বিদেশে , হাতে - কলমে ।
* তিন বা বহু পদে দ্বন্দ্ব সমাস হলে তাকে বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস বলে । যেমন : সাহেব - বিবি - গােলাম , হাত পা - নাক - মুখ - চোখ ইত্যাদি।
২ . কর্মধারয় সমাস
যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেয্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয় , তাকে কর্মধারয় সমাস বলে । যেমন – নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম । শান্ত অথচ শিষ্ট = শান্তশিষ্ট । কাচা অথচ মিঠা = কাচামিঠা ।
কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয় ।
১ . দুটি বিশেষণ পদে একটি বিশেষ্যকে বােঝালে । যেমন – যে চালাক সেই চতুর = চালাক - চতুর ।
২ . দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বােঝালে । যেমন – যিনি জজ তিনিই সাহেব = জজ
সাহেব ।
৩ . কার্যে পরম্পরা বােঝাতে দুটি কৃতন্ত বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয় । যেমন – আগে ধােয়া
পরে মােছা = ধােয়ামােছা ।
৪ . পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষ বাচক হয় । যেমন – সুন্দরী যে
লতা = সুন্দরলতা , মহতী যে কীর্তি = মহাকীর্তি ।
৫ . বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপল হলে , “ মহৎ ' ও ' মহান ' স্থানে ' মহা " হয় । যেমন =
মহৎ যে জ্ঞান = মহাজ্ঞান , মহান যে কবি = মহাকবি ।
৬ . পূর্বপদে ' কু ' বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে 'কু' স্থানে 'কৎ' হয় । যেমন -
কু যে অর্থ = কদর্থ, কু যে আচার = কদাচার ।
৭. পরপদে ' রাজা ' শব্দ থাকলে কর্মধারয় সমাসে ‘ রাজ ' হয় । যেমন – মহান যে রাজা = মহারাজ ।
৮ . বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনাে কখনাে বিশেষণ পরে আসে , বিশেষ্য আগে
যায় । যেমন – সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ , অধম যে নর = নরাধম ।
কর্মধারয় সমাসের প্রকারভেদ
কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকার – মধ্যপদলােপী , উপমান , উপমিত ও রূপক কর্মধারয় সমাস ।
১ . মধ্যপদলােপী কর্মধারয়ঃ
যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লােপ হয় , তাকে মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস বলে । যথা - সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন , সাহিত্য বিষয়ক সভা = সাহিত্যসভা , স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ = স্মৃতিসৌধ ।
২ . উপমান কর্মধারয়ঃ
উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু । প্রত্যক্ষ কোনাে বস্তুর সাথে পরােক্ষ কোনাে বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয় , আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে , তাকে কালা হয় উপমান । উপমান ও উপমেয়ের একটি সাধারণ ধর্ম থাকবে । যেমন = ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ = ভ্রমরকৃষ্ণকেশ । এখানে অমর উপমান এবং কেশ উপমেয় ।
কৃষ্ণত্ব হলাে সাধারণ ধর্ম । সাধারণ ধর্মবাচক পসের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয় । তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে । যথা – তুষারের ন্যায় শুত্র = তুষারশুভ্র , অরুণের ন্যায় রাঙা = অরুণরাঙা ।
৩ , উপমিত কর্মধারয়ঃ
সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমানের যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে ।
এ সমাসে উপমেয় পদটি পূর্বে বসে ।যেমন – মুখ চন্দ্রের ন্যায় = চন্দ্রমুখ । পুরুষ সিংহের ন্যায় = সিংহপুরুষ ।
৪ . রুপক কর্মধারয়ঃ
উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অতিন্নতা কল্পনা করা হলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয় ।
এ সমাসে উপমেয় পদ পূর্বে বসে এবং উপমান পদ পরে বসে এবং সমস্যমান পদে রূপ " অথবা " ই ' যোগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয় । যেমন - ক্রোধ রূপ অনল = ক্রোধানল , বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু , মন রূপ মাঝি =মনমাঝি । ।
আরও কয়েক ধরনের কর্মধারয় সমাস রয়েছে । কখনাে কখনো সর্বনাম , সংখ্যাবাচক শব্দ এবং উপসর্গ আগে বসে পরপদের সাথে কর্মধারয় সমাস গঠন করতে পারে ।
যেমন - অব্যয়ঃ কুকর্ম , যথাযােগ্য ।
সর্বনামঃ সেকাল একাল ।
সংখ্যাবাচক শব্দঃ একজন , দোতলা ।
উপসর্গঃ বিকাল , সকাল , বিদেশ , বেসুর ।
৩ . তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদের বিভক্তি লােপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বােঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে ।
সমাসে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত যে কোনাে বিভক্তি থাকতে পারে । আর পূর্বপদের বিভক্তি অনুসারে এদের নামকরণ হয় ।
যেমন - বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন । এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি ' কে ' লােপ পেয়েছে বলে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ ।
তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার দ্বিতীইয়া , তৃতীয়া , চতুর্থী , পঞ্চমী ,ষষ্ঠী , সপ্তমী , নঞ , উপপদ ও অলুক তৎপুরুষ সমাস ।
১ . দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি ( কে , রে ) ইত্যাদি লােপ হয়ে যে সমাস হয় , তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে । যথা- দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রান্ত , বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন ,
ব্যাপ্তি অর্থেও দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয় ।
যেমন : চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী । এরকম । গা - ঢাকা , রথদেখা , বীজবােনা , ভাতরাধা , ছেলে - ভুলানাে ( ছড়া) , নভেল - পড়া ইত্যাদি ।
২ . তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির ( দ্বারা , দিয়া , কর্তৃক ইত্যাদি ) লােপে যে সমাস হয় , তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে ।
যথা - অস্ত্র দ্বারা আঘাত = অস্ত্রাঘাত, ঢেকি দিয়ে ছাঁটা = ঢেকিছাঁটা, শান দিয়ে বাঁধানো = শানবাঁধানো
এরকম , ঋণগ্রস্ত, ধুলোমাখা, বিজ্ঞানসম্মত, শ্রমলদ্ধ ইত্যাদি ।
৩ . চতুর্থ তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে চতুর্থ বিভক্তি ( কে , জন্য , নিমিত্ত ইত্যাদি ) লােপে যে সমাস হয় , তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে ।
যথা - গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি , আরামের জন্য কেদারা = আরামকেদারা , বসতের নিমিত্ত বাড়ি = বসতবাড়ি , বিয়ের জন্য পাগলা = বিয়েপাগলা ইত্যাদি ।
এরূপ - ছাত্রাবাস , ডাকমাশুল , চোষকাগজ , শিশুমঙ্গল , মুসাফিরখানা , হজ্বযাত্রা , মলগুদাম , রান্নাঘর , মাপকাঠি , বালিকা বিদ্যালয় , পাগলাগারদ ইত্যাদি । |
৪. পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি ( হতে , থেকে, চেয়ে ইত্যাদি ) লােপে যে তৎপুরুষ সমাস হয় , তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে ।
যথা - খাঁচা থেকে ছাড়া = খাঁচাছাড়া , বিলাত থেকে ফেরত = বিলাতফেরত ইত্যাদি ।
সাধারণত চ্যুত , আগত , ভীত , গৃহীত , বিরত , মুক্ত , উত্তীর্ণ , পালানাে , ভ্রষ্ট ইত্যাদি পরপদের সঙ্গে যুক্ত হলে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয় ।
যেমন : স্কুল থেকে পালানাে = স্কুলপালানো , জেল থেকে মুক্ত = জেলমুক্ত ইত্যাদি । এরূপ জেলখালাস , বোটাখসা , আগাগােড়া , শাপমুক্ত , ঋণমুক্ত ইত্যাদি ।
৫. যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে যষ্ঠী বিভক্তির রে , এর ) লােপ হয়ে যে সমাস হয় , তাকে যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে । যথা : চায়ের বাগান = চাবাগান , রাজার পুত্র = রাজপুত্র , খেয়ার ঘাট খেয়াঘাট ।
অনুরূপভাবে ছাত্রসমাজ , দেশসেবা , দিল্লীশ্বর , বদরনাচ , পাটক্ষেত , ছবিঘর , ঘােড়দৌড় , শ্বশুরবাড়ি , বিড়ালছানা ইত্যাদি ।
৬ . সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি ( এ , য় , তে ) লােপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন : গাছে পাকা = গাছপাকা , দিবায় নিদ্রা = দিবানিদ্রা ।
এরূপ - বাকপটু , গােলাভরা , তালকানা , অকালমৃত্যু , বিশ্ববিখ্যাত , ভােজনপটু , সানবীর , বাক্সবন্দি , বস্তাপচা , রাতকানা , মনমরা ইত্যাদি ।
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে কোনাে কোনাে সময় ব্যাসবাক্যে পরপদ সমস্তপদের পূর্বে আসে । যেমন – পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব , পূর্বে অশ্রত = অশ্রুতপূর্ব , পূর্বে অদৃষ্ট = অদৃষ্টপূর্ব ।
৭ . নঞ তৎপুরুষ সমাস : না বাচক নঞ অব্যয় ( না , নেই , নাই , নয় ) পূর্বে বসে যে তৎপুরুষ সমাস হয় , তাকে ন তৎপুরুষ সমাস বলে । যথা — ন আচার = অনাচার , ন কাতর = অকাতর ।
এরূপ = অনাদর , নাতিদীর্ঘ , নাতিখর্ব , অভাব , বেতাল ইত্যাদি ।
খাঁটি বাংলায় অ , আ , না কিংবা অনা হয় । যেমন - ন কাল = অকাল বা আকাল । তদ্রুপ - আধােয়া , অকেজো , অজানা , অচেনা , আপুনি , নাছােড় , অনাবাদী , নাবালক ইত্যাদি ।
না - বাচক অর্থ ছাড়াও বিশেষ বিশেষ অর্থে নঞ তৎপুরুষ সমাস হতে পারে । যথা
অভাব - ন বিশ্বাস = অবিশ্বাস ( বিশ্বাসের অভাব ) ।
ভিন্নতা - ন লৌকিক = অলৌকিক ।
অল্পতা - ন কেশা = অকেশা ।
বিরােধ - ন সুর = অসুর ।
অপ্রশস্ত - ন কাল = অকাল ।
মন্দ - ন ঘাট = অঘাট ।
এরূপ – অমানুষ , অসঙ্গত , অভদ্র , অনন্য , অগম্য ইত্যাদি ।
৮ . উপপদ তৎপুরুষ সমাস : যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎপ্রত্যয় যুক্ত হয় সে পদকে উপপদ বলে । কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয় , তাকে বলে উপপদ তৎপুরুষ সমাস । যেমন - জলে চরে যা = জলচর , জল দেয় যে = জলদ , পঙ্কে জন্মে যা = পঙ্কজ ।
এরূপ - - গৃহস্য , সত্যবাদী , ইন্দ্রজিৎ , ছেলেধরা , ধামাধরা , পকেটমার , পাতাচাটা , হাড়ভাঙ্গা , মাছিমারা , ছারপােকা , ঘরপােড়া , বর্ণচোরা , গলাকাটা , পা - চাটা , পাড়াবেড়ানি , ছা - পােষা ইত্যাদি ।
৯. অলুক তৎপুরুষ সমাস : যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লােপ হয় না , তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে ।
যেমন : গায়ে পড়া = পায়েপড়া ।
এরূপ - ঘিয়ে ভাজা , কলে ছাটা , কলের গান,
খাওয়ার পানি, খেলারমাঠ, গায়েরচাদর,
পথে-নামা, মাদুরে-বসা, বানে-ভাসা
দ্রষ্টব্য । গায়ে - হলুদ , হাতেখড়ি প্রভৃতি সমস্তপদে পরপদের অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয় না অর্থাৎ হলুল বা খড়ি বােঝায় না , অনুষ্ঠান বিশেষকে বােঝায় । সুতরাং এগুলাে অলুক তৎপুরুষ নয় , অলুক বহুব্রীহি সমাস ।
৪ . বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলাের কোনােটির অর্থ না বুঝিয়ে , অন্য কোনো পদকে বােঝায় , তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে ।
যথা - বহু ব্রীহি ( ধান ) আছে যার = বহুব্রীহি । এখানে বহু ' কিবাে ‘ ব্রীহি ' কোনােটিরই অর্থের প্রাধান্য নেই , যার বহু ধান আছে এমন লােককে বােঝাচ্ছে ।
এরূপ - বীণাপাণি , খরম-পেয়ে ইত্যাদি
বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার , যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যরূপে ব্যবহৃত হয় ।
যথা : আয়ত লােচন যার না আয়তলােচনা ( স্ত্রী ) , মহান আত্মা যার = মহত্মা , স্বচ্ছ সলিল যার = স্বচ্ছসলিলা , নীল বসন যার = নীলবসনা , স্থির প্রতিজ্ঞা যার = স্থিরপ্রতিজ্ঞ , ধীর বুদ্ধি যার = ধীরবুদ্ধি ।
‘ সহ ' কিংবা ' সহিত ' শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে ‘ সহ ' ও ' সহিত ' এর স্থলে ' স ' হয় যেমন : বান্ধবসহ বর্তমান = সবান্ধব , সহ উদর যার = সহােদর > সােদর । এরূপ - সজল , সফল , সদর্প , সপ , সকল্যাণ ইত্যাদি ।
বহুব্রীহি সমাসে পরপদে মাতৃ , পত্নী , পুত্র , স্ত্রী ইত্যাদি শব্দ থাকলে এ শব্দগুলাের সঙ্গে ‘ ক ’ যুক্ত হয় যেমন : নদী মাতা (মাতৃ) যার = নদীমাতৃক , বি ( বিগত ) হয়েছে পত্নী যার = বিপত্নীক ।
এরূপ – সস্ত্রীক , অপুত্রক ইত্যাদি ।
বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদে ' অক্ষি ' শব্দের স্থলে ' অক্ষ ' এবং নাভি ' শব্দ স্থলে ‘ নাভ ' হয় । যেমন : কমলের ন্যায় অক্ষি যার = কমলাক্ষ , পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ । এরূপ = ঊর্ণনাভ ।
বহুব্রীহি সমাসে পরপদে জায়া শব্দ স্থানে জানি হয় এবং পূর্বপদের কিছু পরিবর্তন হয় ।
যেমন : যুবতী জায়া যার = যুবজানি ( যুবতী স্বলে ‘ যুব ’ এবং জায়া ' স্থলে জানি হয়েছে ) ।
বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘ চুড়া ' শব্দ সমস্ত পদে ‘ চূড় ” এবং ' কর্ম ' শব্দ সমস্ত পদে কর্মা ' হয় ।
যেমন : চন্দ্র চূড়া যার = চন্দ্রচূড় , বিচিত্র কর্ম যার = বিচিত্রকর্মা ।
বহুব্রীহি সমাসে সমান ' শব্দের স্থানে " স ' এবং “ সহ ' হয় ।
যেমন : সমান কর্মী যে = সহকর্মী , সমান বর্ণ যার = সমবর্ণ , সমান উদর যাদের = সহােদর ।
বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘ গন্ধ ' শব্দ স্থানে ‘ গন্ধি ' বা ' গন্ধা ' হয় ।
যথা : সুগন্ধ যার = সুগন্ধি , পদ্মের ন্যায় গন্ধ যার = পদ্মগন্ধি , মৎস্যের ন্যায় গন্ধ যার = মৎস্যগন্ধ ।
বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ
বহুব্রীহি সমাস আট প্রকারঃ সমানাধিকরণ , ব্যাধিকরণ , ব্যতিহার , নঞ, মধ্যপদলােপী , প্রত্যয়ান্ত , অলুক ও সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি ।
১ . সমানাধিকরণ বহুব্রীহিঃ
পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয় ।
যেমন : হত হয়েছে শ্রী যার = হতশ্রী , খােশ মেজাজ যার = খােশমেজাজ ।
এরকম - হৃতসর্বস্ব , উচ্চশির , পীতাম্বর , নীলকণ্ঠ , জবরদস্তি , সুশীল , সুশ্রী , ইত্যাদি ।
২ . ব্যাধিকরণ বহুব্রীহিঃ
বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনােটিই যদি বিশেষণ না হয় , তবে তাকে বলে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি ।
যথা : আশীতে ( দাঁতে ) বিষ যার = আশীবিষ , কথা সর্বস্ব যার = কথাসর্বস্ব ।
পরপদ কৃদন্ত বিশেষণ হলেও ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয় ।
যেমন : দুই কান কাটা যার = দু কানকাটা , বোটা খসেছে যার = বোটাখসা ।
অনুরূপভাবে – ছা - পােষা , পা - চাটা , পাতা - চাটা , পাতাছেঁড়া , ধামাধরা ইত্যাদি ।
৩ . ব্যতিহার বহুব্রীহিঃ
ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয় । এ সমাসে পূর্বপদে “ আ ” এবং উত্তরপদে ' ই ' যুক্ত হয় ।
যথা- হাতে হাতে যে যুদ্ধ - হাতাহাতি , কানে কানে যে কথা = কানাকানি ।
এমনি ভাবে - চুলাচুলি , কাড়াকাড়ি , গালাগালি , দেখাদেখি , কোলাকুলি , লাঠালাঠি , ইত্যাদি ।
৪ . নঞ বহুব্রীহিঃ
বিশেষ পূর্বপদের আগে নঞ ( না অর্থবােধক ) অব্যয় যােগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে তাকে নঞ বহুব্রীহি বলে ।
নঞ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয় ।
যেমন : ন ( নাই ) জন যার = অজ্ঞান, বে ( নাই ) হেড যার = বেহেড , না ( নাই ) চারা ( উপায় ) যার = নাচার, নি (নাই ) ভুল যার = নির্ভুল , না ( নয় ) জানা যা = নাজানা , অজানা ইত্যাদি ।
এরকম - নাহক , নিরুপায়, অবুঝ , অকেজো , বে পরােয়া , বেহুশ , অনন্ত , বেতার ইত্যাদি ।
৫ . মধ্যপদলােপী বহুব্রীহিঃ
বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনাে অংশ যদি সমস্তপদে লােপ পায় , তবে তাকে । মধ্যপদলােপী বহুব্রীহি বলে ।
যেমন : বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর = বিড়ালচোখী , হাতে খড়ি । দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি ।
এমনি ভাবে – গায়ে হলুদ , মেনিমুখাে ইত্যদি ।
৬ . প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহিঃ
যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ , এ , ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি । যথা - এক দিকে চোখ ( দৃষ্টি ) যার = একচোখা ( চোখ + আ ) , ঘরের দিকে মুখ যার = ঘরমুখাে (মুখ + ও ) । নিঃ ( নেই ) খরচ যার = নি-খরচে (খরচ + এ) ।
এরকম - দোটানা , দোমনা , একগুঁয়ে , অকেজো । একঘরে , দোনলা , দোতলা , ঊনপাঁজুরে ইত্যাদি ।
৭ .অলুক বহুব্রীহিঃ
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনাে পরিবর্তন হয় না , তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে ।
অলুক বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষণ হয় ।
যথা : মাথায় পাগড়ি যার = মাথায়পাগড়ি , গলায় গামছা যার = গলায়গামছা ( লােকটি ) ।
এরূপ - হাতে - ছড়ি , কানে - কলম , গায়ে - পড়া , হাতে - বেড়ি , কানে - থাটো ইত্যাদি ।
৮ . সংখ্যাবাচক বহুব্রীহিঃ
পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্তপদটি বিশেষণ বােঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয় । এ সমাসে সমসতপদে ‘ আ ’ , ‘ ই ’ বা ‘ ই ’ যুক্ত হয় । যথা - দশ গজ পরিমাণ যার = দশগজি , চৌ ( চার ) চাল যে ঘরের = চৌচালা । এরূপ — চারহাতি , তেপায়া ইত্যাদি ।
কিন্তু , সে ( তিন ) তার ( যে যন্ত্রের ) = সেতার ( বিশেষ্য ) ।
৯. নিপাতনে সিদ্ধ ( কোনাে নিয়মের অধীনে নয় ) বহুব্রীহিঃ
দু দিকে অপ যার = দ্বীপ , অন্তর্গত অপ যার = অন্তরীপ , নরাকারের পশু যে = নরপশু , জীবিত থেকেও যে মৃত = জীবন্ত , পণ্ডিত হয়েও যে মূৰ্থ = পণ্ডিতমূর্খ ইত্যাদি ।
যেমন : তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল , চৌরাস্তার সমাহার চৌরাস্তা , তিন মাথার সমাহার = তেমাথা , শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী , পঞ্চ = হটের সমাহার পঞ্চবটী , ত্রি ( তিন ) পদের সমাহার = ত্রিপলী ইত্যাদি ।
এরূপ - অধাতু , চতুর্ভুজ , চতুরঙ্গ , ত্রিমােহিনী , তেরনদী , পঞ্চভূত , সাতসমুদ্র ইত্যাদি ।
যেমন : জানু পর্যন্ত লম্বিত ( পর্যন্ত শব্দের অব্যয় ‘ আ ' ) = আজানুলম্বিত ( বাহ্ ) , মরণ পর্যন্ত = আমরণ ।
সামীপ্য ( নৈকট্য ) , বিপসা ( পৌনঃপুনিকতা ) , পর্যন্ত , অভাব , অনতিক্রম্যতা , সাদৃশ্য , যােগ্যতা প্রভৃতি নানা অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয় ।
নিচের উদাহরণগুলােতে অব্যয়ীভাব সমাসের অব্যয় পদটি বন্ধনীর মধ্যে দেখানাে হলাে ।
১. সামীপ্য ( উপ ) : কণ্ঠের সমীপে = উপকণ্ঠ , কুলের সমীপে = উপকুল ।
২. বিপসা ( অনু , প্রতি) : দিন দিন = প্রতি দিন ,ক্ষণে ক্ষণে = প্রতিক্ষণে ,ক্ষণ ক্ষণ = অনুক্ষণ
৩. অভাব ( নিঃ = নির ) : আমিষের অভাব = নিরামিষ , ভাবনার অভাব = নির্ভাবনা , জলের অভাব
= নির্জল , উৎসাহের অভাব = নিরুৎসাহ ।
৪. পর্যন্ত ( আ ) : সমুদ্র থেকে হিমাচল পর্যন্ত = আসমুদ্রহিমাচল ,
পা থেকে মাথা পর্যন্ত = আপাদমস্তক ।
৫. সাদৃশ্য ( উপ ) : শহরের সদৃশ = উপশহর , গ্রহের তুল্য = উপগ্রহ , বনের সদৃশ = উপবন
৬. অনতিক্রম্যতা ( যথা ) : রীতিকে অতিক্রম না করে ও যথারীতি , সাধ্যকে অতিক্রম না করে = যথাসাধ্য । এরুপ যথাবিধি , যথাযােগ্য ইত্যাদি ।
৭. অতিক্রান্ত (উৎ) : বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল , শৃঙ্খলাকে অতিক্রান্ত = উচ্ছৃঙ্খল ।
৮. বিরােধ ( প্রতি ) : বিরুদ্ধ বাদ = প্রতিবাদ , বিরুদ্ধ কুল = প্রতি ।
৯. পশ্চাৎ ( অনু ) : পশ্চাৎ গমন = অনুগমন , পশ্চাৎ ধাবন = অনুধাবন ।
১০. ঈষৎ (আ) : ঈষৎ নত = আনত , ঈষৎ রক্তিম = আরক্তিম ।
১১ . ক্ষুদ্র অর্থে ( উপ ) : উপগ্রহ , উপনদী ।
১২ . পূর্ণ বা সমগ্ৰ অৰ্থে : পরিপূর্ণ , সম্পূর্ণ ।
(পরি বা সম)
১৩.দূরবর্তী অর্থে (প্র ,পর) : অক্ষির অগােচরে = পরােক্ষ । এরূপ প্রপিতামহ ।
১৪ .প্রতিনিধি অর্থে(প্রতি) : প্রতিচ্ছায়া , প্রতিচ্ছবি , প্রতিবিম্ব ।
১৫.প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থে (প্রতি) : প্রতিপক্ষ , প্রত্যুত্তর ।
উল্লিখিত প্রধান ছয়টি সমাস ছাড়াও কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে ।
১ . প্রাদি সমাস : প্র, প্রতি , অনু প্রভৃতি অব্যয়ের সঙ্গে যদি কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্যের সমাস হয় , তবে তাকে বলে প্রাদি সমাস ।
যথা : প্র ( প্রকৃষ্ট ) যে বচন = প্রবচন । এরূপ — পরি ( চতুর্দিকে ) যে ভ্রমণ = পরিভ্রমণ , অনুতে ( পশ্চাতে ) যে তাপ = অনুতাপ , প্র ( প্রকৃষ্ট রূপে ) ভাত ( আলােকিত ) = প্রভাত , প্র ( প্রকৃষ্ট রূপে ) গতি = প্রগতি ইত্যাদি ।
২ . নিত্যসমাস : যে সমাসে সমস্যমান পদগুলাে নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে , ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না, তাকে নিত্যসমাস বলে ।
তদর্থবাচক ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্যাংশ যােগে এগুলাের অর্থ বিশদ করতে হয় ।
যেমন : অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর , কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র , অন্য গৃহ = গৃহান্তর , ( বিষাক্ত ) কাল ( যম ) তুল্য ( কাল বর্ণের নয় ) সাপ = কালসাপ , তুমি আমি ও সে = আমরা, দুই এবং নব্বই = বিরানব্বই ।
৩ . ব্যতিহার বহুব্রীহিঃ
ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয় । এ সমাসে পূর্বপদে “ আ ” এবং উত্তরপদে ' ই ' যুক্ত হয় ।
যথা- হাতে হাতে যে যুদ্ধ - হাতাহাতি , কানে কানে যে কথা = কানাকানি ।
এমনি ভাবে - চুলাচুলি , কাড়াকাড়ি , গালাগালি , দেখাদেখি , কোলাকুলি , লাঠালাঠি , ইত্যাদি ।
৪ . নঞ বহুব্রীহিঃ
বিশেষ পূর্বপদের আগে নঞ ( না অর্থবােধক ) অব্যয় যােগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে তাকে নঞ বহুব্রীহি বলে ।
নঞ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয় ।
যেমন : ন ( নাই ) জন যার = অজ্ঞান, বে ( নাই ) হেড যার = বেহেড , না ( নাই ) চারা ( উপায় ) যার = নাচার, নি (নাই ) ভুল যার = নির্ভুল , না ( নয় ) জানা যা = নাজানা , অজানা ইত্যাদি ।
এরকম - নাহক , নিরুপায়, অবুঝ , অকেজো , বে পরােয়া , বেহুশ , অনন্ত , বেতার ইত্যাদি ।
৫ . মধ্যপদলােপী বহুব্রীহিঃ
বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনাে অংশ যদি সমস্তপদে লােপ পায় , তবে তাকে । মধ্যপদলােপী বহুব্রীহি বলে ।
যেমন : বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর = বিড়ালচোখী , হাতে খড়ি । দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি ।
এমনি ভাবে – গায়ে হলুদ , মেনিমুখাে ইত্যদি ।
৬ . প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহিঃ
যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ , এ , ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি । যথা - এক দিকে চোখ ( দৃষ্টি ) যার = একচোখা ( চোখ + আ ) , ঘরের দিকে মুখ যার = ঘরমুখাে (মুখ + ও ) । নিঃ ( নেই ) খরচ যার = নি-খরচে (খরচ + এ) ।
এরকম - দোটানা , দোমনা , একগুঁয়ে , অকেজো । একঘরে , দোনলা , দোতলা , ঊনপাঁজুরে ইত্যাদি ।
৭ .অলুক বহুব্রীহিঃ
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনাে পরিবর্তন হয় না , তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে ।
অলুক বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষণ হয় ।
যথা : মাথায় পাগড়ি যার = মাথায়পাগড়ি , গলায় গামছা যার = গলায়গামছা ( লােকটি ) ।
এরূপ - হাতে - ছড়ি , কানে - কলম , গায়ে - পড়া , হাতে - বেড়ি , কানে - থাটো ইত্যাদি ।
৮ . সংখ্যাবাচক বহুব্রীহিঃ
পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্তপদটি বিশেষণ বােঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয় । এ সমাসে সমসতপদে ‘ আ ’ , ‘ ই ’ বা ‘ ই ’ যুক্ত হয় । যথা - দশ গজ পরিমাণ যার = দশগজি , চৌ ( চার ) চাল যে ঘরের = চৌচালা । এরূপ — চারহাতি , তেপায়া ইত্যাদি ।
কিন্তু , সে ( তিন ) তার ( যে যন্ত্রের ) = সেতার ( বিশেষ্য ) ।
৯. নিপাতনে সিদ্ধ ( কোনাে নিয়মের অধীনে নয় ) বহুব্রীহিঃ
দু দিকে অপ যার = দ্বীপ , অন্তর্গত অপ যার = অন্তরীপ , নরাকারের পশু যে = নরপশু , জীবিত থেকেও যে মৃত = জীবন্ত , পণ্ডিত হয়েও যে মূৰ্থ = পণ্ডিতমূর্খ ইত্যাদি ।
৫. দিগু সমাস
সমাহার ( সমষ্টি ) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয় , তাকে দ্বিগু সমাস বলে । দ্বিগু সমাসে সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয় ।যেমন : তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল , চৌরাস্তার সমাহার চৌরাস্তা , তিন মাথার সমাহার = তেমাথা , শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী , পঞ্চ = হটের সমাহার পঞ্চবটী , ত্রি ( তিন ) পদের সমাহার = ত্রিপলী ইত্যাদি ।
এরূপ - অধাতু , চতুর্ভুজ , চতুরঙ্গ , ত্রিমােহিনী , তেরনদী , পঞ্চভূত , সাতসমুদ্র ইত্যাদি ।
৬. অব্যয়ীভাব সমাস
পূর্বপদে অব্যয়যােগে নিষ্পন্ন সমাসে যদি অব্যয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে , তবে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে । অব্যয়ীভাব সমাসে কেবল অব্যয়ের অর্থযােগে ব্যাসবাক্যটি রচিত হয় ।যেমন : জানু পর্যন্ত লম্বিত ( পর্যন্ত শব্দের অব্যয় ‘ আ ' ) = আজানুলম্বিত ( বাহ্ ) , মরণ পর্যন্ত = আমরণ ।
সামীপ্য ( নৈকট্য ) , বিপসা ( পৌনঃপুনিকতা ) , পর্যন্ত , অভাব , অনতিক্রম্যতা , সাদৃশ্য , যােগ্যতা প্রভৃতি নানা অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয় ।
নিচের উদাহরণগুলােতে অব্যয়ীভাব সমাসের অব্যয় পদটি বন্ধনীর মধ্যে দেখানাে হলাে ।
১. সামীপ্য ( উপ ) : কণ্ঠের সমীপে = উপকণ্ঠ , কুলের সমীপে = উপকুল ।
২. বিপসা ( অনু , প্রতি) : দিন দিন = প্রতি দিন ,ক্ষণে ক্ষণে = প্রতিক্ষণে ,ক্ষণ ক্ষণ = অনুক্ষণ
৩. অভাব ( নিঃ = নির ) : আমিষের অভাব = নিরামিষ , ভাবনার অভাব = নির্ভাবনা , জলের অভাব
= নির্জল , উৎসাহের অভাব = নিরুৎসাহ ।
৪. পর্যন্ত ( আ ) : সমুদ্র থেকে হিমাচল পর্যন্ত = আসমুদ্রহিমাচল ,
পা থেকে মাথা পর্যন্ত = আপাদমস্তক ।
৫. সাদৃশ্য ( উপ ) : শহরের সদৃশ = উপশহর , গ্রহের তুল্য = উপগ্রহ , বনের সদৃশ = উপবন
৬. অনতিক্রম্যতা ( যথা ) : রীতিকে অতিক্রম না করে ও যথারীতি , সাধ্যকে অতিক্রম না করে = যথাসাধ্য । এরুপ যথাবিধি , যথাযােগ্য ইত্যাদি ।
৭. অতিক্রান্ত (উৎ) : বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল , শৃঙ্খলাকে অতিক্রান্ত = উচ্ছৃঙ্খল ।
৮. বিরােধ ( প্রতি ) : বিরুদ্ধ বাদ = প্রতিবাদ , বিরুদ্ধ কুল = প্রতি ।
৯. পশ্চাৎ ( অনু ) : পশ্চাৎ গমন = অনুগমন , পশ্চাৎ ধাবন = অনুধাবন ।
১০. ঈষৎ (আ) : ঈষৎ নত = আনত , ঈষৎ রক্তিম = আরক্তিম ।
১১ . ক্ষুদ্র অর্থে ( উপ ) : উপগ্রহ , উপনদী ।
১২ . পূর্ণ বা সমগ্ৰ অৰ্থে : পরিপূর্ণ , সম্পূর্ণ ।
(পরি বা সম)
১৩.দূরবর্তী অর্থে (প্র ,পর) : অক্ষির অগােচরে = পরােক্ষ । এরূপ প্রপিতামহ ।
১৪ .প্রতিনিধি অর্থে(প্রতি) : প্রতিচ্ছায়া , প্রতিচ্ছবি , প্রতিবিম্ব ।
১৫.প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থে (প্রতি) : প্রতিপক্ষ , প্রত্যুত্তর ।
উল্লিখিত প্রধান ছয়টি সমাস ছাড়াও কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে ।
১ . প্রাদি সমাস : প্র, প্রতি , অনু প্রভৃতি অব্যয়ের সঙ্গে যদি কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্যের সমাস হয় , তবে তাকে বলে প্রাদি সমাস ।
যথা : প্র ( প্রকৃষ্ট ) যে বচন = প্রবচন । এরূপ — পরি ( চতুর্দিকে ) যে ভ্রমণ = পরিভ্রমণ , অনুতে ( পশ্চাতে ) যে তাপ = অনুতাপ , প্র ( প্রকৃষ্ট রূপে ) ভাত ( আলােকিত ) = প্রভাত , প্র ( প্রকৃষ্ট রূপে ) গতি = প্রগতি ইত্যাদি ।
২ . নিত্যসমাস : যে সমাসে সমস্যমান পদগুলাে নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে , ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না, তাকে নিত্যসমাস বলে ।
তদর্থবাচক ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্যাংশ যােগে এগুলাের অর্থ বিশদ করতে হয় ।
যেমন : অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর , কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র , অন্য গৃহ = গৃহান্তর , ( বিষাক্ত ) কাল ( যম ) তুল্য ( কাল বর্ণের নয় ) সাপ = কালসাপ , তুমি আমি ও সে = আমরা, দুই এবং নব্বই = বিরানব্বই ।
সমাস সম্পর্কিত ভিডিও সমূহ দেখার অনুরোধ রইলো
দ্বন্দ্ব সমাস সম্পর্কিত ভিডিও
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন